মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩১ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : দুই মাসের বেশি সময় ধরে ভোগাতে থাকা পেঁয়াজের দাম আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ছেড়ে কমতে শুরু করেছে। পাশাপাশি বেশ কিছু শীতকালীন সবজির দামও কিছুটা কমেছে।
তবে এখনও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে শসা ও খিরা। নতুন আলু বাজারে এলেও বেড়েছে গতবছরের পুরোনো আলুর দাম। তবে কেন আলুর দাম বাড়ছে, সে প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বিক্রেতারা।
আর দেশে নতুন পেঁয়াজ ওঠাসহ বিভিন্ন উৎস থেকে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় দামও কিছুটা সহনশীলতার দিকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার কারওয়ানবাজারে গিয়ে দেখা যায়, পাকিস্তানি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১৮০ টাকায়, দেশি পেঁয়াজ ২২০ টাকায়, চীনা পেঁয়াজ ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিছু কিছু দোকানে মুড়িকাটা পেঁয়াজও রয়েছে। দাম প্রতিকেজি ১৬০ টাকা।
ঢাকার শ্যামবাজারে পেঁয়াজের পাইকারি আড়ত আমানত ভান্ডারের বিক্রেতা আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, গত এক সপ্তাহে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
এদিন শ্যামবাজারে দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ২০০ টাকায়, মিয়ানমারের পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা, মিশরের পেঁয়াজ ১৩০ টাকা থেকে ১৩৫ টাকায়, চীনের পেঁয়াজ ৯৫ থেকে ১০০ টাকা এবং পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ব্যবসায়ী রাজ্জাক বলেন, “আড়তে মোটামুটি পণ্য আসতেছে। দাম কমতির দিকে। আশা করা যায় দাম কমবে। আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের বড় চালান ঢুকবে বলে শোনা যাচ্ছে। সেই খবরে দাম কিছুটা কমেছে।”
সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর বাংলাদেশে এই নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকে। যে পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকায় পাওয়া যেত, তার দাম কয়েক দিনের মধ্যে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এরপর ক্রমশ বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। এরমধ্যে নভেম্বরের প্রথমার্ধে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতের পর সরবরাহ বিঘ্নিত হয়ে পেঁয়াজের দাম আড়াইশ টাকা ছাড়িয়ে যায়।
অস্বাভাবিক এই মূল্য বৃদ্ধির মধ্যে সরকার কার্গো বিমানে করে পেঁয়াজ আনার ঘোষণা দেওয়ার পর নভেম্বরের দ্বিতীয় ভাগে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও কয়েক দিনের মধ্যে আবার তা বেড়ে যায়। এখন মিশর থেকে সমুদ্র পথে আনা পেঁয়াজের বড় চালান বাংলাদেশে ঢুকছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন ।
সংকট সামালে পেঁয়াজ আমদানিতে এগিয়ে আসা মেঘনা গ্রুপের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ ইকবাল বলেন, “বৃহস্পতিবার মিশর থেকে আসা ৭৮০ টন পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে, এগুলো এখন খালাসের কাজ চলছে। এছাড়া আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ৯০০ টন পেঁয়াজ আসছে। এসব পেঁয়াজ টিসিবির মাধ্যমে বিতরণ হচ্ছে।”
সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, আগামী ৪ ডিসেম্বর আড়াই হাজার টন পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে। সেই পেঁয়াজ দিয়ে দেওয়া হবে টিসিবিকে।
শুক্রবার রাজধানীর আগারগাঁও, মহাখালী ও কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুলা, গাজর, বেগুন, শিমসহ বেশ কয়েকটি সবজির দাম গত দুই দিন ধরে কেজিতে সর্বোচ্চ ১০ টাকা করে কমেছে। কিছু সবজির দাম রয়েছে স্থিতিশীল।
আগারগাঁও কাচাবাজারের বিক্রেতা শাহাদাত হোসেন জানান, মুলা, বেগুন, ফুল কপি, বাধা কপিসহ কয়েকটি সবজির দাম একদিন আগের তুলনায় কেজিতে ১০ টাকা করে কমেছে।
তিনি জানান, মুলা প্রতিকেজি ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা, ফুল কপি প্রতিটি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মরিচের কেজি ৬০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, শিম ৫০ টাকা, নলডাঙা সিম ৮০ টাকা, শসা ৭০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, টমেটো ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা, শালগম ৪০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা ও লাউ প্রতিটি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এর মধ্যে মুলা, ফুল কপি, বেগুন ও শিমের দাম কেজিতে ১০ টাকা করে কমেছে বলে এই বাজারের একাধিক বিক্রেতা জানিয়েছেন।
সবজির দাম কি আসলেই কমেছে, প্রশ্নের জবাবে এই বাজারে কেনাকাটা করতে আসা সজীব রহমান বলেন, “যে কয়েকটি সবজির দাম কমেছে তাতো অবশ্যই স্বস্তির খবর। কিন্তু বাজারে এখনও অধিকাংশ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে। এ বছর অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দামই বেশি। পেঁয়াজের আলোচনায় না-ই গেলাম।”
এই বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২৩০ টাকা থেকে ২৪০ টাকায়। আগাম আসা মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা প্রতিকেজি।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা ফজলু হাওলাদার বলেন, এই সপ্তাহে পুরান আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে অন্তত ৫ টাকা করে। পুরনো আলু প্রতিকেজি ৩০ টাকায় এবং নতুন আলু ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া ফুল কপি ৩০ টাকা, দেশি টমেটো ৮০ টাকা, গাজর ৬০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, শিম ৫০ টাকা, বাজারে নতুন আসা নলডোগ শিম ৮০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ টাকা, পেঁয়াজ পাতা ৮০ টাকায় প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে। বাঁধা কপি প্রতিটি মিলছে ৩০ টাকায়।
মহাখালী কাচাবাজারে শহীদ উল্লাহ জানান, এই বাজারে শিম প্রতিকেজি ৬০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, শালগম ৪০, পটল ৫০, করলা ৮০ টাকা, বাঁধা কপি ও ফুলকপি ৪০ টাকা, দেশি গাজর ৬০ টাকা, শসা ১০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
এর মধ্যে গত দুই দিনে ফুল কপি, মুলাসহ কয়েকটি সবজির দাম কেজিতে ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
কারওয়ান বাজারে একজন ক্রেতা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই বাজারে সবজির দাম চড়া। এর মধ্যে কোনো সবজির যদি দাম কমে তা অবশ্যই স্বস্তির খবর। তবে দাম আর অনেক আগেই কমা উচিত ছিল।
গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকেই বাজারে শীতকালীন আগাম শাক সবজি আসতে শুরু করে। তখন অধিকাংশ সবজির দাম ছিল প্রতিকেজি একশ টাকার বেশি। মুলা, শালগম, ফুলকপির দাম ছিল প্রতিকেজি ৭০ টাকা থেকে ৯০ টাকার মধ্যে।
এই বাজারে সবজির পাইকারি বিক্রেতা আবু হানিফ বলেন, সবজির দাম গত তিনদিন ধরে কমতে শুরু করেছে। খুচরায়ও ধীরে ধীরে এর প্রভাব পড়বে। দাম আর বাড়ার সম্ভাবনা নাই। এখন শহরের বাজারগুলোতে প্রচুর সবজির আমদানি হবে। কারণ গ্রামে-গঞ্জের হাটগুলোতে এখন প্রচুর সবজি উঠছে।